মনিরামপুরে করোনায় মৃত্যু প্রফুল্ল সরকারের (৬৩) শ্মশানে সৎকারে বাঁধা প্রদান, অবশেষে সেচ্ছাসেবি সংগঠন তাকওয়া ফাউন্ডেশনের সদস্যরা এগিয়ে এসে ওই শ্মশানেই সৎকার।
মৃত রতন সরকার খাঁনপুর ইউনিয়নের সাতনল গ্রামের মৃত রতন সরকারের ছেলে প্রফুল্ল সরকার। জানাযায়, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত আটটায় তার মৃত্যু হয়। করোনা ভাইরাস এখন মানুষের মধ্যে এতই অতংক ছড়িয়েছে যে, প্রফুল্লের মৃত্যুর পর তার লাশের সৎকারের জন্য আত্মীয় স্বজন অথবা এলাকার কোন ব্যক্তি এগিয়ে আসেনি।
হাসপাতাল থেকে তার লাশটি শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্ত্রী এবং সন্তানকে কেউ সাহায্যের হাত প্রসারিত করেনি। ফলে হাসপাতালের বারান্দায় লাশ নিয়ে যখন তারা দীর্ঘ প্রতিক্ষায়। তখন খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে তাকওয়া ফাউন্ডেশনের কয়েকজন সদস্য গিয়ে প্রফুল্লের মরদেহ নিয়ে পৌর শহরের তাহেরপুর মহাশ্মশানে সৎকার করেন।
তবে অভিযোগ রয়েছে করোনায় মৃত্যু হওয়ায় প্রফুল্লের মরদেহ মহাশ্মশানে সৎকারে বাঁধা দেন শ্মশানের ঘোশাই (তত্ববধায়ক) শুশীল মন্ডল ও তার লোকজন। পরবর্তিতে উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম, পৌর কাউন্সিলর বাবুলাল চৌধুরীসহ মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ও সরাসরি করোনা যুদ্ধা ডাঃ মোসাব্বিরুল ইসলাম রিফাত, সাংবাদিক আব্দুল্লাহ সোহানসহ কয়েকজনের হস্তক্ষেপে সৎকার করা হয়।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাকওয়া ফাউন্ডেশনের সদস্যরা মুসলমান হয়েও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকের মৃতদেহ সৎকার করে মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। অবশ্য সৎকারপূর্ব সনাতন ধর্মীয় রীতির যথাসম্ভব আনুষ্ঠানিকতা করেন কাউন্সিলর বাবুলাল চেীধুরী ও পৌর এলাকার বিশ্বজিৎ শাহা নামের এক যুবক। সাতনল গ্রামে প্রফুল্ল সরকারের বাড়ি থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুরত্ব মাত্র ৪ কিলোমিটার। ৩ ছেলে এবং ১ মেয়ে সন্তানের জনক প্রফুল্ল সরকার গোপালপুর বাজারে ব্যবসা করতেন। ৩ ছেলেই মণিরামপুর পৌর শহরের জুয়েলারী দোকানের কর্মচারী।
প্রফুল্ল সরকার কয়েকদিন ধরে জ্বর এবং সর্দি-কাশিতে ভ‚গছিলেন। পরে নমুনা পরীক্ষার পর করোনা পজেটিভ ধরা পড়ে। সেই থেকে তিনি বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তার ছোট ছেলে শেখর সরকার জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর তার বাবার শ্বাশকষ্ট বেড়ে যায়। এ সময় টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টির মধ্যেই মা মায়া সরকারকে সাথে নিয়ে শেখর তার বাবাকে একটি ভ্যানে করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
জরুরী বিভাগের ডাঃ ফারুক আযম জানান, এ সময় তাকে অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়। রাত ৮টার দিকে প্রফুল্লের মৃত্যু হয়। প্রফুল্ল সরকারের ছোট ছেলে শেখর সরকার জানান, তার বাবার মৃত্যুর পর লাশের সৎকারের জন্য আত্মীয় স্বজন অথবা এলাকার কোন ব্যক্তি এগিয়ে আসেনি। এমনকি হাসপাতাল থেকে মৃতদেহটি শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদেরকে কেউ সাহায্যের হাত প্রসারিত করেনি। ফলে হাসপাতালের বারান্দায় লাশ নিয়ে যখন তারা দীর্ঘ প্রতিক্ষায়।
এক পর্যায়ে খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে তাকওয়া ফাউন্ডেশনের কয়েকজন সদস্য গিয়ে প্রফুল্লের মরদেহ নিয়ে পৌর শহরের তাহেরপুর মহাশ্মশানে যান স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সৎকারের জন্য। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে করোনায় মৃত্যু হওয়ায় প্রফুল্লের মরদেহ তাহেরপুর মহাশ্মশানে সৎকারে বাঁধা দেন শ্মশানের ঘোশাই (তত্ববধায়ক) শুশীল মন্ডল ও তার লোকজন।
প্রফুল্ল সরকারের ছেলে শেখর সরকার, তাকওয়া ফাউন্ডেশনের সদস্য মাওলানা ইয়াসিন, উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান মিন্টুসহ অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিভিন্ন রকম কথাবর্তার পর উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম এবং পৌর কাউন্সিলর বাবুলাল চৌধুরীর হস্তক্ষেপে মরদেহ সৎকারের অনুমতি মেলে।
তবে মৃতদেহ সৎকারে বাঁধা দেওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে শ্মশান কমিটির সাধারন সম্পাদক তুলসি বসু জানান, মূলত: করোনা আতংকে অনাকাংিখত এ ঘটনা ঘটেছে। পৌর কাউন্সিলর বাবুলাল চৌধুরী জানান, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাকওয়া ফাউন্ডেশনের সদস্যরা মুসলমান হয়েও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকের মৃতদেহ সৎকার করে মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
উল্লেখ্য করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ধাপে মনিরামপুর উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে অন্তত: দেড় শতাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।